Cannibalism

ক্যানিবলিজম

ছবিঃ https://medium.com

ক্যানিবলিজম শব্দটি শুনলে প্রথমেই মনের মধ্যে একটা বিকৃত মানসিকতার উদ্ভব হয়, সেই সাথে একটা রহস্যময় ভয়ংকর অনুভূতি যেটা আপনাকে গাঁ শিরিশির করা রোমাঞ্চকর চিন্তাধারার সাথে পরিচয় করিয়ে দিবে। কোন প্রানি যখন নিজের প্রজাতির অন্যকাউকে খাদ্য হিসেবে বিবেচনা করে তখন ক্যানিবলিজম নামক শব্দটির (স্প্যানিশ ক্যারিবস= ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান উপজাতি অথবা ক্যানিবাল= অসভ্য) উদ্ভব হয়। ক্যানিবলিজম প্রায় ১,৫০০ প্রজাতির প্রানিদের মধ্যে সাধারন বাস্তুতান্ত্রিক মিথস্ক্রিয়া হিসেবে এইপর্যন্ত নথিভুক্ত করা হয়েছে। এদের মধ্যে হিউম্যান ক্যানিবলিজম অন্যপ্রানিদের থেকে আলাদা কারন মানুষ সর্বোচ্চ বুদ্ধিসম্পন্ন। এর উল্লেখ পাওয়া যায় যেমন প্রাচীনকালে তেমনি বর্তমান সময়ে। ক্যানিবলিজম এর উল্লেখ পাওয়া যায় বিভিন্ন লোকাচারবিদ্যা বা কিংবদন্তিমূলক কালচারে পরিচিতি হিসেবে বিভিন্ন কঠোর শাস্তিস্বরূপ বা ইতিহাসের ঘৃণ্য সত্তারুপে যেমন হেন্সেল অ্যান্ড গ্রেটেল এর সেই ডাকিনী, গ্রিক মিথলজির লামিয়া এবং স্লাভিক লোকাচারবিদ্যার বাবা ইয়াগা। গ্রিক মিথলজির বিভিন্ন গল্প যেমন থায়েসটেস, তেরেউস এবং ক্রনাস কিংবা তান্তালুস। এছাড়া আলগোকুয়ানদের ওওেন্ডিগোর মত কিংবদন্তি ক্যানিবলিস্টীক স্পিরিট যে কিনা কোন মানুষ অথবা দানবের উপর ভর করত। জুনিদের এটাহসাইয়া নামক মনস্টার যে কিনা নিজের অনুসারি দৈত্যদের ভক্ষন করত এবং মনুষ্যদেহ খুঁজত। এছাড়া নেটিভ আমেরিকান আথাবাস্কানদের অর্ধ মানব উইচুগ নামক দৈত্য। বর্তমানেও বিভিন্ন অঞ্চলে যুদ্ধে অথবা নেহায়েত প্র্যাকটিস এর মত ক্যানিবলিজম মতবাদের পরিচিতি মেলে; উল্লেখযোগ্য লাইবেরিয়া কিংবা কঙ্গো গনপ্রজাতন্র২০১২ এর দিকেও মেলানিসিয়ান আদিবাসীরা যুদ্ধক্ষেত্রে ও পাপুয়া নিউ গিনিতে কালচারাল রিচুয়াল বলে প্র্যাকটিস করা হত। এজটেকদের মধ্যে যুদ্ধে নিহতদের স্বজনরা আত্মসর্গমূলক ধর্মীয় রিচুয়াল হিসেবে মৃতদের দেহ ভক্ষণ করতো যাকে এন্ডোক্যানিবলিজম বলা হত। গোত্রের বাইরে এই ক্যানিবলিজমকে বলা হয় এক্সোক্যানিবলিজম (২য় বিশ্বযুদ্ধে জাপানিজ ও চাইনিজ কিছু গোষ্ঠী)। ক্যানিবলিজম এর পেছনে মূলত ২ ধরনের সাইকোলজি কাজ করতে পারেঃ ১। মানসিক বিকৃতি (পারিপার্শ্বিক অবস্থার ভিক্তিতে), ২। সারভাইভাল এনাটমি বা হাঙ্গার (মৌলিক চাহিদা)। উল্লেখ্য প্রতিশোধমূলক চিন্তা, একরকম কিলিং কোড, আত্মস্বার্থ প্রথমভাগে পড়ে। উৎসর্গ, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় রিচুয়াল সাধারনত ১ম ও ২য় ভাগের সংমিশ্রণ। খাদ্যের সংকট অথবা যুদ্ধক্ষেত্রের ক্যানিবলিজম ২য় ভাগের। ক্যানিবলিজম বিভিন্ন ধরনের হতে পারেঃ ১। সিম্বোলিক বা স্পিরিচুয়াল, ২। সারভাইভাল, ৩। এন্ডোক্যানিবলিজম ও এক্সোক্যানিবলিজম, ৪। প্যাথলজিক্যাল, ৫। অটোক্যানিবলিজমএদের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ হল প্যাথলজিক্যাল ক্যানিবলরা এটাকে সারভাইভাল হাঙ্গার হিসেবেও বিবেচনা করা যায় কারন এদের নিত্যদিনকার চাহিদার মধ্যে এই ক্যানিবলিজম পড়ে। এবার আসা যাক ক্যানিবল কমিউনিটির কথায়। কি অবাক হলেন। হ্যাঁ, এদের বিভিন্ন চ্যাট গ্রুপ, মিটআপ-গিটাপ গ্রুপও আছে, ঠিক সঙ্গী বাছাই করা গ্রুপ গুলোর মত, এখানে একটা বিশেষ শ্রেনিকে ফেলা যেতে পারে যারা স্যাক্সুয়াল ক্যানিবলিজমে বিশ্বাসী। কে কাকে কিভাবে খাবে, কোন দেহাংশের চাহিদা কেমন, স্বাদ বিশ্লেষণ ইত্যাদি। এদের মধ্যে একদল অটোক্যানিবলিজমে বিশ্বাসী যারা  লাইসোসোম নামক কোষীয় অঙ্গাণুর মতো নিজেদের বিভিন্ন দেহাঙ্গ নিজেরা ভক্ষণ করে থাকে। এখানে BIID (Body Index Identity Disorder) কথা উল্লেখ করা যেতে পারে যে মানসিক রোগে রোগী নিজের কোন দেহাঙ্গকে অন্যকারো মনে করে এবং অপসারন এর চিন্তা করে। ক্যানিবলরা এগুলোকে মানসিক প্রশান্তির মত মনে করে যেমন হিউম্যান ফ্লেশ আলাদা করাকে অনেকে যৌন উত্তেজনা হিসেবে ভাবে অনেকে নিজের শক্তির পরিমাপও করে। আবার অনেকের বিশ্বাস তাদের শিকারগুলো তাদের মাঝে বাস করে বা এর মাধ্যমে আত্মার মিলন ঘটে এবং স্বর্গ প্রাপ্তি হয়। ক্যানিবলদের মধ্যে এম্পেথি (সহমর্মিতা) শব্দটি দুর্লভ। এছাড়া অনেকের মতে ক্যানিবলরা তাদের উদ্দেশ্য হাসিলের সময় নিজেদের অস্তিত্ব উৎসর্গ করে, নিজেকে অন্যকেউ ভাবে যেমন স্বর্গীয় বা নরকীয় কোন দেবতা, আবার অনেকে নিজেকে অন্যকারো দাস ভাবে বা নেহায়েৎ প্রতিদিনকার নিত্যকর্ম বলে দাবি করেএখানে ভালো একটা বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা দাঁড় করানো যায় যে কোন কারনবশত ক্যানিবলিজমকে ট্যাবু হিসেবে বিবেচনা করা হয়। গবেষণায় দেখা গেছে হিউম্যান ব্রেইন খাওয়ার ফলে কুরু বা প্রিয়ন ডিজিস নামে একধরনের রোগ হতে পারে যা ম্যাড কাও রোগের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। অতিরিক্ত হিউম্যান ব্লাড দেহে হেমক্রোমাটোসিস এর মত অবস্থার সৃষ্টি করে। হিউম্যান লেদার, বিভিন্ন ফ্লেশ মার্কেট ডার্ক ওয়েবে অহরহ দেখা মেলে। আসি কিছু বিখ্যাত ক্যানিবলিজম দৃষ্টান্তে। ২০১৭ সালে দক্ষিণ রাশিয়ার ক্রাসনোদার থেকে গ্রেফতার করা হয় দিমিত্রি বাকসিভ ও তার স্ত্রী নাটালিয়া বাকসিভাকে। প্রায় ৩০ জন মানুষকে খুন করে ভক্ষণ করেছে ওই দম্পতি। আমেরিকান যেফ্রি দাহমার, একজন ক্যানিবলিস্টীক সিরিয়াল কিলার ১৯৭৮-১৯৯১ এর মধ্যে ১৭ জন যুবকে খুন করে। সোভিয়েত সিরিয়াল কিলার নিকলাই জুমিগালিয়াভ (মেটাল ফেং) ১০ জনকে খুন করে এবং তাদের রক্ত পানসহ দেহাবশেষ ভক্ষন করেন। এছাড়া পাকিস্থানি ক্যানিবল ব্রাদারস মোহাম্মদ আরিফ আলি ও ফারমান আলি, মাইয়ামি এর কজওয়ে ফেইস অ্যাটাকার রুডি ইগুএন। মেক্সিকান জোস লুইসকে পুলিশ গ্রেফতার করে তার খাবার টেবিলে সাথে তার বান্ধবীর দেহাংশ যেটা রান্না করা হয়েছিল লেমন সিজনড এর সাহায্যে, তার রান্নাঘরে “ক্যানিবল ইন্সটিঙ্কট” নামে একটা পাণ্ডুলিপিরও দেখা মেলে। আলফ্রেড প্যাকার আমেরিকান প্রসপ্যাকটার (দা কলোরাডো ক্যানিবল) ট্রাভেলিং এর সময় সারভাইভিং এর নামে ৫ জন কে ক্যানিবলাইজড করে। আমেরিকান আলবার্ট ফিশ (গ্রে ম্যান), একজন চাইল্ড ক্যানিবলিস্ট,


ছবিঃ theodysseyonline.com, somewhereinblog.net, mrt.com

যে ক্লেইম করে স্বয়ং গড তাকে নির্দেশ দিত বাচ্চাদের উপর এ অত্যচারের।  ১৯৭৫ সালে দৈনিক বাংলায় খলিল উল্লাহ (খইল্লা পাগলা) নামে এক নরখাদকের খবর বের হয়, যে কিনা মরা মানুষের কলিজা খায়, শেষ তাকে দেখা যায় আজিমপুর কবরস্থানে। থমাস হ্যারিসের কালজয়ী বই সাইলেন্স অফ দা ল্যাম্বস থেকে একটা উক্তি দিয়ে শেষ করিঃ “আই এইট হিজ লিভার উইথ সাম ফ্লাভা বিনস্ এন্ড অ্যা নাইস কিয়ান্টি।’’

তথ্যসূত্রঃ

http://pnsnews24.com

https://en.wikipedia.org

https://the-line-up.com

www.livescience.com

 https://www.stufftheydontwantyoutoknow.com

www.vox.com


 

 

 


Comments